
হেলিকপ্টার প্রস্তুতই ছিল। তবু তামিম ইকবালকে ওঠানো হলো না সেই আকাশযানে। বিকেএসপির পার্শ্ববর্তী কেপিজি হাসপাতালেই চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। তামিম ইকবালকে বাঁচাতে সেরা সিদ্ধান্ত কি এটাই? সুস্থ হয়ে ফিরলে নিজেকে নিয়ে হয়ত এই প্রশ্নটাই বারবার করবেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক। কারণ সেই সময়ে উপস্থিত থাকা ডাক্তারদের ওই একটা সিদ্ধান্ত যে, তর্কসাপেক্ষে বাঁচিয়ে দিয়েছে তার জীবনটাই।
বিকেএসপির স্বনামধন্য কোচ মন্টু দত্ত সকাল থেকেই দেখেছেন তামিমের বিধ্বস্ত শারীরিক অবস্থার পুরোটা। জানালেন, হেলিকপ্টারে ওঠার মতো পরিস্থিতিই ছিল না। ডাক্তাররা শেষ সময়ে এসে বলেছিলেন, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলে হয়ত তামিম ইকবালকে আর ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে না।’
সাভারের কেপিজি হাসপাতালের সামনে থেকে বিকেএসপি কোচ মন্টু দত্ত শোনালেন সকাল থেকে কী হয়েছিল তামিমের সঙ্গে। জানালেন শাইনপুকুরের বিপক্ষে ম্যাচের পর একবার হাসপাতালে এসেছিলেন তিনি ‘সে (তামিম ইকবাল) ভর্তি হয়। ডাক্তাররা তাকে ছাড়বে না বলে। সে নিজ থেকেই শিপন (মোহামেডান ম্যানেজার) ফোন করে বলে আমার জন্য একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করো। আমি ঢাকাতে চলে যাবো। আমাকে শিপন তখন বলে একটা হেলিকপ্টার নামানোর ব্যবস্থা করেন। তখন ১ নম্বর মাঠে হেলিকপ্টার নামানোর ব্যবস্থা করি।
https://www.effectiveratecpm.com/etwnwhfp?key=d6c69cad14b2b304b8a5d6fa93830c53
যখন হেলিকপ্টার নামানো হয় তখন তামিম বুঝতে পেরে এবং অনেকটা জোর করেই অ্যাম্বুলেন্সে চেপে বিকেএসপি ফেরত যান। মন্টু দত্ত জানান, বিকেএসপিতে আরেকবার ফেরার পথে কেপিজি হাসপাতালেরই এক ডাক্তার তার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু সেখানে যাবার পর তার পালস পাওয়া যায়নি।’
মিন্টু দত্ত এরপরে জানান, ‘এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে যাব, তার কোনো পালস পাওয়া যায় না। দশ মিনিট সেখানে চাপ দেয়ার পর কিছুটা পালস পেলে তাকে আবার কেপিজি হাসপাতালে আনা হয়। ওই মুহূর্তে ডাক্তার বলছিল আমরা যদি তামিমকে এয়ারে তুলি, হয়ত আমরা তামিমকে আর ফিরে পাবো না। তারপর এখানে নিয়ে আসার পর তাকে আবার ইমার্জেন্সিতে ভেতরে ঢোকানো হয়। তড়িঘড়ি করে অপারেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ব্লক ধরা পড়ে।’
তামিম ইকবালের সবশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে এরইমাঝে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন সাভারের কেপিজি বিশেষায়িত হাসপাতালের (পূর্বের ফজিলাতুননেসা মুজিব হাসপাতাল) ডিরেক্টর ড. রাজিব।
গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি তামিম ইকবাল ভাই আজ সকাল বেলা অসুস্থ হয়েছিলেন। ৯টা-সাড়ে ৯টার দিকে বিকেএসপিতে অসুস্থ হন। এখানে নিয়ে আসার পর চিকিৎসা শুরু হয়। পরবর্তীতে আমরা চিন্তা করি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যাবে কিনা। কিন্তু উনার অবস্থা গুরুতর হয়ে যায়, এই গুরুতর অবস্থায় আবার আমাদের কাছে আসেন। গুরুতর অবস্থা থেকে যত রকম চিকিৎসা দরকার সবই করা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে উনার অবস্থা অনুকূলে আছে।’
তিনি যোগ করেন, ‘উনার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, এটার জন্য এনজিওগ্রাম করে এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেন্ট করা হয়েছে। স্টেন্টিং খুব স্মুথ ও কার্যকরভাবে হয়েছে। এটা করেছেন ডা. মনিরুজ্জামান মারুফ। উনার ব্লকটা পুরোপুরি চলে গেছে এখন। এখনো উনি পর্যবেক্ষণে আছে, গুরুতর অবস্থা এখনো কাটেনি। এটা একটু সময় লাগবে। সবাই উনার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছি।’
আজ সকালে তামিম ইকবাল
এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল-ক্লিনিক শাখা) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান বলেন, তিনি (তামিম ইকবাল) একিউট এমআই বা হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন, যার ফলে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। প্রাথমিকভাবে প্রাইমারি পিসিআই করা হয় এবং এলসিএক্স নামের ধমনীতে ব্লক ধরা পড়ে। তাই জরুরিভিত্তিতে সেখানে স্টেন্ট (রিং) বসানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্লকেজ কমে গিয়ে হার্টে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, যা তাকে দ্রুত সুস্থ হতে সহায়তা করবে।